রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন

অম্বুবাচী কি এবং কেন হয়
সুশান্ত মণ্ডল, খুলনা / ১৮৭ ভিউ
সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩

অম্বুবাচী একটি ধর্মীয় আচার। যা বহুকাল ধরে হিন্দুদের ভিতর বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে।

মহাভারত, ব্রহ্মাণ্ড, পুরাণ, নীলতন্ত্র, রূদ্রযামল, শিবচরিত, শাক্তানন্দ-তরঙ্গিনী এবং মহাপীঠ নিরূপন ও মঙ্গলকাব্যের সূত্র ধরে বলা যায় সতীর ৫১ খন্ডের  একটি খন্ড কামাক্ষা ধামে পতিত হয়েছিল সেটি হলো সতীর অঙ্গের “যোনি” খন্ড । তাই অম্বুবাচীতে কামাক্ষা ধামে যোনি শিলা হতে এখনো পর্যন্ত অদ্ভুদ ধরনের লাল জলের ধারা বইতে দেখা যায় এবং ঐ জল ব্রহ্মপুত্র নদে বয়ে যেতে দেখা যায়। ফলে তখন ব্রহ্মপুত্রের জলও লাল হয়ে যায়। তাই এ সময় পৃথিবীর সমস্ত জলরাশি অপবিত্র থাকে।আর এই অম্বাবুচি তিথি পর্যন্ত সর্বত্রই ঝিরিঝিরি বা কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হয় ঠিক যেমনটি হয় রজস্রাবের সময়। অনেক আগে কামাখ্যাপীঠের মন্দির অম্বুবাচীর প্রবৃত্তিকালে মন্দিরের দরজা নিজ থেকে বিকট শব্দ করে বন্ধ হয়ে যেত এবং অম্বুবাচী ছাড়ার পর আবার স্বয়ংই খুলে যেত।

 

অম্বুবাচী একটি ধর্মীয় আচার হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের প্রচীন কৃষি পদ্ধতি। আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী যখন বর্ষার জলে সিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে ঋতুবতী বলে মনে করা হয়। আমরা জানি, মেয়েরা রজঃস্বলা হলেই সন্তান ধারন করতে পারেন। বসুমতীকে সেই রূপেই কল্পনা করা হয়। এই সময়ে তাঁকে তিন দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়।

চাষিরা ওই দিনগুলোতে কোন কৃষিকাজ করেন না। অম্বুবাচীর দিনগুলো ধরিত্রীর ঋতুকাল ধরে নিয়ে চাষে বিরত থাকেন। তাঁরা মনে করেন, এই সময় বর্ষার জলে সিক্ত হয়ে বসুমাতা চাষের উপযোগী হয়ে উঠেবে। এ ক্ষেত্রে উর্বরতাকেন্দ্রিক ভাবনায় নারী এবং বসুমাতা যেন সমার্থক হয়ে উঠে। অম্বুবাচীর আগের দিনকে বলা হয় “অম্বুবাচী প্রবৃত্তি” আর তিন দিনের পরের দিনকে বলা হয় “অম্বুবাচী নিবৃত্তি”। এর পরেই আবার চাষিরা চাষাবাদ শুরু করতে পারেন।

 

অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে জামাই-মেয়ে এনে আম-কাঁঠাল, মাছ-মাংস সহকারে বিশেষ আয়োজন করা হয়। এ সময় নানা অনুষ্ঠানেরও আয়াজোন করা হয়। প্রতি বছর খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের খামারবাটী গ্রামে অম্বুবাচী উপলক্ষ্যে বিবাহিত বনাম অবিবাহিত ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। খেলা শেষে বিজয়ী দলকে বড় কাঠাঁল উপহার দেওয়া হয়। সেই কাঁঠাল সকল দর্শককে খেতে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য গত বছর ও এ বছর করনার কারনে খেলা হচ্ছে না।

এ বছর ১৪২৮ বাং  সালে ৭ আষাঢ় (২০২১ ইং ২১জুন) “অম্বুবাচী প্রবৃত্তি” এবং ১০ আষাঢ় (২০২১ ইং ২৫ জুন) “অম্বুবাচী নিবৃত্তি”।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
খুলনার কয়রা মসজিদকুঁড় প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় মসজিদ শেখ খায়রুল ইসলাম পাইকগাছা খুলনা প্রতিনিধি :- মসজিদকুঁড় মসজিদ যেটি কয়রার আমাদি ইউনিয়নে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় স্থান।মসজিদটির পাশ দিয়ে কপোতাক্ষ নদ খুব কাছেই রয়েছে সুন্দরবন।১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর মসজিদটি সম্পর্কে জানতে পারা যায়। মসজিদটিতে কোন লিপি না থাকাই এর নির্মাণ সময় সম্পর্কের সঠিক ধারণা নেই। মাটির নিচ খুঁড়ে মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়েছে বলে একে মসজিদকুঁড় নামকরণ করা হয়। ধারণা করা হয়, খানজাহান আলীর শিষ্য বুড়া খান ও ফতেহ খান এই গ্রামে কাছারি করে এলাকা শাসন করতেন ১৪৫০-১৪৯০ সালের সময়কালে। তাঁরা এখানে একটি নয় গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন, নাম রাখেন মসজিদকুড়। ইট-সুরকির তৈরি মসজিদটি দক্ষিণ বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন প্রত্নসম্পদ৷
জনপ্রিয়
সর্বশেষ