বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভবতী ভাতা এমন কোনো ভাতা নেই যেখান থেকে ঘুষ নেন না। এ অভিযোগ উঠেছে নুরুল ইসলাম নামে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের কোন শেষ নেই। তাদের অভিযোগ উপকারভোগীরা কার্ড করার জন্য কখনো ভাতার পুরো টাকা, আবার কখনো অগ্রিম টাকা, কখনো বা ভাতার টাকার একটি অংশ দিতে বাধ্য হন ওই ইউপি সদস্যকে।
বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। টাকা না দিলে কার্ড করে দেন না বলেও অভিযোগ করেছেন তার ওয়ার্ডের ভোটাররা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কার্ড পাওয়ার আগে ও পরে পাঁচ হাজার টাকা না দিলে এই ইউপি সদস্য কার্ড বাতিল করার হুমকিও দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে তার হেনস্তার শিকার হতে হয় সাধারণ জনগণের।
ওই ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী মাহমুদ আলী বলেন, আমি গরীব ও বয়স্ক মানুষ কিন্তু ভাতা পাই না। মেম্বারের কাছে গেলে তিনি বলেন ভাতা করে দেব কিন্তু আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে মেম্বারকে আমি টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনো কার্ড করে দেয় নাই। শুধু আমার কাছ থেকেই নয় আরও বহু মানুষের কাছ থেকেও তিনি টাকা নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ভুক্তভোগী বলেন, আমি মেম্বারের কাছে গিয়েছিলাম বয়স্ক ভাতার কার্ড করার জন্য। মেম্বার বলেন টাকা ছাড়া এসব কার্ড করা যায় না। আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। পরে ঋণ করে মেম্বারকে পাঁচ হাজার টাকা দেয়। এখনও কার্ড করে দেয় নাই। টাকাও ফেরত দেয় নাই। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, টাকা দিতে দেরি হলে মেম্বার ওই টাকা নেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেছেন। আর জীবনেও আমার ও আমার পরিবারের কাউকে কার্ড করে দিবেন না বলেও হুমকিও দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী আব্দুল আলী বলেন, কার্ড করতে নাকি অনেক টাকা লাগে। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে নাকি ঘুস দিতে হয়। উপজেলার কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে কার্ড করা যায় না? এসব কথা বলে মেম্বার আমার কাছ থেকে কার্ড করার আগে চার হাজার টাকা নেন। আমি ঋণ করে তাকে টাকা দেই। পরে আমাকে অনেক দিন ঘুরিয়ে কার্ড করে দেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে, ওই ওয়ার্ডের একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, তারা কার্ড করার আগেই ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। যারাই টাকা দেন তাদেরই কার্ড হয়েছে। অনেকের কার্ড করে দেবেন বলে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কেউ আগে টাকা না দিলেও পরে ব্যাংক থেকে ভাতা পাওয়ার সময় টাকা তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার পরও তিনি আরও টাকা দাবি করেন । ভুক্তভোগীরা জানান, যদি কেউ মুখ খোলে তাহলে মেম্বার নুরুল ইসলাম তাদের কার্ড বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। তার লোকজন দিয়ে মারধরের হুমকিও দেয়। তাই কেউ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হন না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো ভাতার কার্ড করার জন্য কারও কাছে টাকা চাইনি।
লক্ষিন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একাব্বর আলী বলেন, আমাদের কাছে কেউ ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেন নাই। বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার জানান, এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷