“পিতার হাতে চুক্তি মেয়ের হাতে মুক্তি”
স্লোগানকে সামনে রেখে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছর আজ (৩১ জুলাই)। ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বিনিময় ঘটে ভারত বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে এবং ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ভারতের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হয় এই দিনে। সমাপ্তি ঘটে ১৬২ ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দিদশা।
ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই বঞ্চিত এ মানুষগুলোকে মূলধারায় যুক্ত করতে বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে হাসিনা সরকার। এ কয়েক বছরের মধ্যেই যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ সামাজিক নিরাপত্তার মতো নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সবকিছুই পূরণ করেছে সরকার। দেশের অভ্যন্তরে অন্যান্য ছিটমহল গুলোর মতো উন্নয়ন ঘটেছে কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া ছিটমহলেও।
বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের যে ১১১টি ছিটমহলের সবচেয়ে বড় এবং আয়তন ৬ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ হেড কাউন্টিং ২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে এখানে ১ হাজার ৩৬৪টি পরিবারের ৬ হাজার ৫২৯ জন মানুষের বসবাস। এসব মানুষদের জীবন মানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বদলে গেছে জীবন ব্যবস্থা। ছিটমহলটির বাসিন্দারা পাচ্ছেন আধুনিক সব সুবিধা।
প্রতিটি গ্রামে রয়েছে প্রশস্ত পাকা রাস্তা। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ। মসজিদ-মন্দির, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, ডিজিটাল সেন্টার, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের নানারকম উন্নয়নমূলক উদ্যোগে পরিণত হয়েছে এক নতুন জনপদ দাসিয়ারছড়া।
শুধু তাই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসা নামে একটি দাখিল মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ফুলবাড়ি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি দাখিল মাদরাসা, দুটি কলেজ, ডিজিটাল আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার, ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালীর হাটে কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টার, ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচটি মসজিদ, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ মিটারের একটি ব্রিজ, ৭টি বক্স কালভার্ট, ৩৫টি ইউড্রেন, ১টি কবরস্থান, শ্মশানঘাট ২টি, টিউবওয়েল ৩৮৪টি, কাঁচাপাকা ল্যাট্রিন ১ হাজার ১৫০টি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে হতদরিদ্র পরিবারের ১০টি বসতবাড়ি নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, শতভাগ বিদ্যুতের সংযোগ, দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ।
শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসার সুপার জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম মিয়া জানান, আমরা পাঁচ বছর যাবৎ বিনা পারিশ্রমিকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে আসছি কিন্তু এখনও বিল বেতন পাইনি।পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি (বাংলাদেশ ইউনিট) এর সাধারণ সম্পাদক জনাব গোলাম মোস্তফা সরকার জানান, ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের মুক্তি ঘটে ২০১৫ সালের ৩১ শে জুলাই ১২:০১ মিনিটে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক এটা আমাদের গর্ব ও অহংকার। তাই আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং খুশি। আমরা অনেক উন্নয়ন পেয়েছি এখানে তিনটি প্রাইমারি স্কুল রয়েছে, একটি দাখিল মাদ্রাসা সরকারি ঘোষণা হয়েছে তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি কলেজ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাই এনটিআরসিএ সহ সকল শর্ত শিথিল করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন ভাতার জন্য জোর দাবি জানান।
দাসিয়ারছড়াকে একটি ইউনিয়ন পরিষদ, এবং যারা ছিটমহল বিনিময়ের জন্য আন্দোলন করেছেন তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ করে জোর দাবী জানান।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় বাংলাদেশ দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, যখন বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় হয়, তখন বাংলাদেশ থেকে ৬৫টি পরিবারের ১০৭ জন হিন্দু এবং ১০০ জন মুসলিম ভারতে যায়। আমাদের এই কালিরহাট বাজারে একটি মসজিদ আছে। তার ঠিক ১০০ গজ দূরে একটি বড় মন্দির আছে। যে যার ধর্ম পালন করছে। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। আমরা মুসলিম-হিন্দু মিলে অনেক ভালো আছি। বর্তমান সরকার আমাদের ভালো রেখেছেন।