রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

রাজাপুরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষনের অভিযোগে মামলা,
আবু সায়েম আকন, রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধিঃ / ২৫৫ ভিউ
সর্বশেষ আপডেট : রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩

ঝালকাঠির রাজাপুরে স্বামী পরিত্যক্তা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। বুধবার সকালে অজ্ঞাত আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন ওই নারীর বড় বোন সুখি বেগম (৪৫)।

গত ৩ জুন সকাল ৮.৩০ মিনিটের সময় রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারী। কিন্তু জন্ম নেয়া সন্তানের বাবা কে তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয় পুরো উপজেলা জুড়ে।

অবশেষে সন্তান প্রসবের ৬দিন পর এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ সন্তানের পিতৃ পরিচয় খুঁজে বের করার জন্য মাঠে নেমেছে। বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রাজাপুর,কাঁঠালিয়া সার্কেল) মো. শাখাওয়াত হোসেন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খোকন হাওলাদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মামলা সূত্রে জানাগেছে, তাঁর ছোট বোন (৩০) একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ১৫ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়। ১০ বছর বয়সী তাঁর একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ৮ বছর আগে স্বামী তাকে তালাক দিলে ভিক্ষা করেই জীবিকা নির্বাহ করতো সে। বোনের বাড়ির পাশে একটি ঘরে সে বসবাস করে। ৯ থেকে ১০ মাস আগে তাঁর ঘরে লোকজনের উপস্থিতি টের পেতেন। তিন মাস আগে বোনের পেট উঁচু দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। এ বিষয়ে বোনকে জিজ্ঞেস করলে পেটের ভেতরে টিউমার হয়েছে বলে সে জানায়। গত ২ জুন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওই নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজমা ইয়াসমিন মুন্নির সহযোগিতায় তাকে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরের তিন ৩ জুন ওই নারী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়। মামলার বাদী তাঁর বোনকে ধর্ষণের বিচারের পাশাপাশি সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর পিতৃ পরিচয় খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন মামলার এজাহারে।

অপরদিকে ছোট বোনকে ধর্ষণে সহায়তাকারী সুখী বেগম এ মামলার বাদী হওয়ায় মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন নিয়ে সচেতন মহলে কানাকানি চলছে। সুখি উপজেলার আঙ্গারিয়া এলাকার মো. লিটন হাওলাদারের স্ত্রী ও ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ এবং বাচ্চা বিক্রয়ে চেষ্টার সহায়তাকারী।
স্থানীয়রা জানায়, আঙ্গারিয়ার খালের চরে নির্জন এলাকায় স্বামী পরিত্যক্ত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী তার আট বছরের ছেলে সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। সাউথপুর ও পূর্ব রাজাপুর এলাকার নয়ন, আবু সাইদ, মানিক, রাহাদ, রফিক, সোহানসহ অজ্ঞাত ১৫/১৬ জন যুবক বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী নারী ঘরে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করতেন। এমনকি ধর্ষণের ঘটনা কাউকে না বলতে সব সময় ভয়ভীতি দেখাতেন অপরাধীরা। ধর্ষনের পরে ঐ প্রতিবন্ধী নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
অভিযোগ রয়েছে, ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় স্থানীয় রজিনা বেগম ও সরোয়ার হোসেন। প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও নেয় তারা। এরপরে প্রতিবন্ধীর বাচ্চা বিক্রিতেও রজিনা ও সরোয়ার মেতে উঠে। ৫০ হাজার টাকায় রাজা মিয়া নামে এক রিক্সা চালকের সাথে বাচ্চা বিক্রয়ের চুক্তি হয়। আগাম নেয় ৩০ হাজার টাকা। রোজিনা ও সরোয়ারের সাথে প্রতিবন্ধী নারীর আপন বড় বোন সুখি বেগম ও দুলাভাই লিটন, খালু সোবাহান যুক্ত ছিল। বাচ্চা প্রসবের পর পরই বাচ্চা তুলে দেয়া হবে রাজা মিয়ার স্ত্রীর হাতে। ঘটনা জানাজানি হলে অসুস্থ অবস্থায় গত ২জুন রাতে প্রতিবন্ধী নারীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ৩ জুন সকালে তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়।
নারীবাদী সংগঠন “রূপান্তর অপরাজিতা”র সদস্য মুন্নি বেগম বলেন, মামলার বাদী সংকটে এতো দিনে মামলা হয়নি। প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে ওসি তদন্তের সাথে কথা বলে মামলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছি। কিন্তু বুধবার সকালে জানতে পারি অজ্ঞাত কারনে ঘটনার সাথে জড়িত ভুক্তভোগীর বড় বোনকে বাদী করে প্রকাশিত অপরাধীদের নাম বাদ দিয়ে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। আমরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এ ব্যাপারে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা আবুল খায়ের মাহমুদ রাসেল বলেন, বর্তমানে মা ও নবজাতক শিশুটি সুস্থ রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ভর্তির সময় ওই নারীর স্বামীর নাম পাওয়া যায়নি।

রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এজাহারে যাদের নাম রয়েছে, প্রথমে তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এরপরে সন্দেহভাজনদের আটক করে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। সন্তানটির প্রকৃত পিতাকেও খুঁজে বের করার জন্য যা করা দরকার পুলিশের পক্ষ থেকে তা করা হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
জনপ্রিয়
সর্বশেষ