গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের পর ২০১৫ সালে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলাধীন সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি স্মরণে প্রতিষ্ঠিত হয় তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা। ছিটমহল বিনিময়ের পর ওই এলাকার লোকজন ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন।
প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের জন্য ওই এলাকার দানশীল ব্যক্তি জনাব আলহাজ্ব আব্দুর রহমান মিয়া তার নিজস্ব জমি দান করেন এবং প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনা কালে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি জনাব মোঃ আলতাফ হোসেনকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে বিধি মোতাবেক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করেন। ২০১৫সালে আমিনুল ইসলাম মিয়াকে সুপার এবং শাহনুর আলমকে সহ-সুপার পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
২০১৭সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক নামকরণের অনুমোদন এবং অত্র মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা জনাব আলহাজ্ব আবদুর রহমান মিয়াকে সভাপতি মনোনীত করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করেন অত্র মাদ্রাসার সুপার আমিনুল ইসলাম মিয়া।
জানা যায়, মাদ্রাসার দাখিল স্তরে প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠদানের অনুমোদন পেতে দেরি হলে বঙ্গবন্ধুর ছিটমহল বিনিময়ের ৭৪এর চুক্তি বিরোধী কিছু লোকের কুপরামর্শে অত্র মাদ্রাসার বর্তমান সহ-সুপার মোঃ শাহনুর আলম, বর্তমান সুপার আমিনুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট এবং ৩২লক্ষ ৩৮হাজার টাকার অর্থ কেলেঙ্কারি সহ বিভিন্ন অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করেন।
পরবর্তীতে ছিটমহল আন্দোলন বিরোধী লোকগুলোর কুপরামর্শে নির্বাহী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রহমান মিয়া, সদস্য হানিফ উদ্দিন, মোজাম্মেল হক এবং বর্তমান সুপার আমিনুল ইসলাম মিয়ার স্বাক্ষর জাল করে বর্তমান সহ-সুপার শাহনুর আলম নিজেকে অত্যন্ত সুকৌশলে নিজেকে সুপার হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে চাকরি দেয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা রাতের আধারে হাতিয়ে নেন।
সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১২ই সেপ্টেম্বর মাদ্রাসা খোলা হলে কিছু দস্যু প্রকৃতির লোকজনের সহযোগিতায় শ্রেণিকক্ষ দখল করে, অফিস কক্ষ তৈরি করে বসে পড়েন ভুয়া সুপার শাহনুর আলম। এতে করে পড়ে যায় শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে বাহিরে। এ ব্যাপারে সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম মিয়া জানান, সহ-সুপার শাহনুর আলমকে অনেকভাবে বলার পরেও শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে দেন নাই। বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। প্রতিষ্ঠিতা সুপার আমিনুল ইসলাম মিয়া আরো জানান, আমি ২০১৫ সালে নিয়োগ পেয়ে অদ্যবধি পর্যন্ত কর্মরত আছি। আমি অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা শিকার করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই প্রতিষ্ঠানটি এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছি কিন্তু সহ-সুপার শাহনুর আলমের এ সকল দুর্নীতি ও অপকর্মের কারণে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মায়ের নামের প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল হাকিম বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস পরে অনেক আনন্দ অনেক আশা নিয়ে মাদ্রাসা আসি। কিন্তু সহ- সুপার শাহনুর আলম হুজুর অপরিচিত অনেক লোকজন নিয়ে এসে বলেন আজ থেকে এরা তোমাদের স্যার, এরাই আজ থেকে ক্লাস নিবেন। কিন্তু আমারা তাদের চিনি না জানিও না কোন দিন দেখিও নাই। উনি আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছেন। আমরা সকল ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা সুপার আমিনুল হুজুরকে জানিয়েছি, তিনি বলেছেন একটু ধৈর্য ধরো ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ভুয়া সুপার শাহনুর আলম ২০১৫ সালের নিয়োগকৃত শিক্ষকগণকে বাদ দিয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ করে ১০লক্ষ ৮৭হাজার টাকা হাতিয়ে নেন যাহা নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং অত্র মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট সহ সকলের জানার বাহিরে।
শুধু তাই নয়, মাদ্রাসার নামীয় অগ্রণী ব্যাংক ফুলবাড়ী শাখা, কুড়িগ্রাম এর জমাকৃত ৪লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কমিটির রেজুলেশন ছাড়া একক স্বাক্ষরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
এ ব্যাপারে সাহনুর আলমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি মাদ্রাসার থাকা কথা বললেও মাদ্রাসায় গিয়ে তার দেখা মেলেনি। অথচ তিনি গত ৩দিন যাবৎ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। সহ-সুপার শাহনুর আলমের সুপার হিসাবে নিয়োগের যেসকল কাগজপত্র পাওয়া যায় তাতে জনাব সাইফুল ইসলাম, তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম এবং জনাব রুহুল আমিন, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম এর স্বাক্ষর রয়েছে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা, আমরা কখনও কোন সময় কোন দিন শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম এ ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে কোন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করেন নাই মরমী লিখিত জবানবন্দি পেশ করেন।
সাবেক সভাপতি জনাব মোঃ আলতাফ হোসেন জানান মোঃ শাহানুর আলম কে আমি নিজেই সহকারি সুপার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছি। কখনোই তাঁকে এই মাদ্রাসায় সুপার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় নাই এবং তিনি কোন কাগজপত্র দেখাতে পারবেন না।
বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব আবদুর রহমান মিয়া জানান, সহকারী সুপার শাহনুর আলম আমার স্বাক্ষর জাল করে অনৈতিকভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রদান করেন যাহা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি এবং অবৈধ। তার কারণেই আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়ের নামের প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার কঠিন শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।